নেপাল ও বাংলাদেশের বন্ধনকে খাবারের মাধ্যমে আরও দৃঢ় করা যায় কি না এমন চিন্তা থেকেই এই উৎসবের আয়োজন। যাঁরা কখনো নেপাল ভ্রমণ করেননি বা নেপালি খাবার খাননি, তাঁদের কাছে নেপালের খাবারের স্বাদ পৌঁছে দিতেই এই উৎসব। এ বিষয়ে কথা হয় স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, ডা. নবীন যাদবের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে সাত বছর কাটিয়েছি। এখান থেকেই এমবিবিএস শেষ করেছি। এই সময়ে আমরা নানা রকম রেস্টুরেন্টে গিয়েছি। এদেশে চাইনিজ, থাই, কোরীয়, এমনকি জাপানিজ রেস্তোরাঁও আছে। কিন্তু বাংলাদেশে নেপালি অথেনটিক স্বাদের খাবারের রেস্টুরেন্ট খুঁজে পাইনি।’
উৎসবে নেপালের বিভিন্ন অঞ্চল ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে একাধিক স্টল অংশ নেয়। প্রতিটি স্টলের নিজস্ব স্বাদ, রং ও গল্প ছিল। নেপালের শিক্ষার্থী ও আমন্ত্রিত শেফদের রন্ধনে মুখরিত হয়ে ওঠে উৎসবস্থল। স্টলগুলোর মধ্যে ছিল নেপালি চ্যাটপাটা ও পানিপুরি: নাওয়ারি সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী খাবার সেল রুটি, মিশ্র নেপালি আলু আচার, চিকেন চোইলা, আচার, চুকাউনি এবং পানিপুরি পরিবেশন করা হয়। টেস্ট অব বুদ্ধা: হিমালয়ান অঞ্চলের জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুডের মধ্যে ছিল পানিপুরি, দই পুরি এবং স্পেশাল হিমালয়ান চিয়া।
মোমো ঘর: নেপালের জনপ্রিয় খাবার মোমোর বিভিন্ন রূপ-স্টিমড, ফ্রায়েড, চিলি, ঝোল ও কোঠে মোমোসহ ফ্রাইড চিকেন, সামোসা, ভেজ পাকোড়া, মাশরুম চিলি, চিকেন বিরিয়ানি, ফিরনি, গাজর হালুয়া, ক্রিম লাচ্ছি, মালাই লাচ্ছি পরিবেশন করা হয়। নেপালি ঘাসা: নেপালের চিতোয়ান শহরের মিড টাউন হোটেলের শেফ দুর্গা প্রসাদ কাড়েলের রেসিপিতে শেফস স্পেশাল বুথে ছিলো বেশ ভিড়। চলতি মাসের ১৬ তারিখ, দুপুর সাড়ে বারোটায় শুরু হয়ে আয়োজন শেষ হয় বিকেল সাড়ে পাঁচটায়। চারটা নাগাদ উৎসব স্থলে পৌঁছে দেখি বেশির ভাগ খাবার শেষের পথে।
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভাণ্ডারী। উৎসবমুখর পরিবেশ, চারপাশে নেপালি সংগীত, পোশাক, খাবার আর ছাত্রছাত্রীদের ব্যস্ততা। আয়োজন নিয়ে তিনি বলেন ‘বর্তমানে প্রায় ২৭০০ নেপালি শিক্ষার্থী বাংলাদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে। তাদের বেশিরভাগই মেডিকেল সায়েন্সে পড়ছে। এই পুরো আয়োজনটি শিক্ষার্থীদের নিজস্ব পরিকল্পনায়, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় করা হয়েছে। দূতাবাস এবং ঢাকায় অবস্থানরত নেপালি কমিউনিটির সবাই, তাদের পাশে ছিলাম। আমরা চাই এই ধারা অব্যাহত থাকুক।
বন্ধুত্বের এই সেতুবন্ধন আরও দৃঢ় হোক সংস্কৃতির বিনিময়ের মাধ্যমে। এই উৎসব শুধুই খাবারের নয়, এটি ছিল দুই দেশের সংস্কৃতি, হৃদ্যতা ও ভবিষ্যতের সম্পর্কের এক উষ্ণ মেলবন্ধন। স্বাদ, গান, পোশাক ও বন্ধুত্বের গল্পে ভরপুর এই দিনটি হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশে নেপালি শিক্ষার্থীদের আত্মপরিচয়ের গর্বময় প্রকাশ।