বিইউএফটি শিক্ষার্থীদের সৃজনকর্মের বর্ণাঢ্য প্রদর্শনী
শেয়ার করুন
ফলো করুন

১৯ ফেব্রুয়ারি বিইউএফটির তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের ডিজাইন করা পোশাকের প্রদর্শনীর আয়োজন করে বিইউএফটি ফ্যাশন ক্লাব। ফ্যাশন স্টাডিজ বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের প্রায় ২৪ জন শিক্ষার্থীর উদ্ভাবিত ডিজাইনগুলো প্রদর্শিত হয় এখানে। আয়োজনটির তত্ত্বাবধানে ছিলেন সামসাদ হাসনাইন, সহকারী অধ্যাপক, ফ্যাশন স্টাডিজ বিভাগ, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি। ক্যাম্পাসের মাল্টিপারপাস হলের সামনে প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।


বিভিন্ন ধরনের ইউনিক সব আইডিয়া ও থিম ধরে নিজেদের কালেকশনগুলো দাঁড় করিয়েছে। এর জন্য তাঁরা অনুপ্রেরণা নিয়েছে প্রকৃতি, পরিবেশ, দেশীয় ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও স্থাপত্য থেকে। তাঁদের অনুপ্রেরণা থেকে বাদ যায়নি বিশ্বের বিখ্যাত চিত্রকলা, প্রযুক্তি, সিনেমার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়বস্তু।

বিজ্ঞাপন

রবিউল বারি রমের কালেকশনের থিম ‘টেপা পুতুল’। পোশাকের প্যাটার্নে টেপা পুতুলের থ্রিডি অ্যাপ্লিক দিয়ে একটি সুবিধাবঞ্চিত কিশোর ও তাঁর পরিবারের সংগ্রাম তুলে ধরেছেন তিনি। এই সংগ্রহের আরামদায়ক সুতি ও খাদি ফেব্রিকগুলো রং করতে ব্যবহার করেছেন লাল মাটি, খয়ের ও হরীতকী। এই সংগ্রহে আরামদায়ক পোশাকের পাশাপাশি ছিল পাটের দড়ি দিয়ে বোনা ব্যাগ ও টেপা পুতুলের কানের দুল।
গ্রিক পুরাণের দেব-দেবীর অনুপ্রেরণা থেকে পশ্চিমা পোশাকের সংগ্রহ ‘দ্য অলিম্পিয়ানস’ নামের কালেকশন তৈরি করেছে মাইশা ফেরদৌস। কালার প্যালেটে সবুজ, বেগুনি, মেরুন রং প্রাধান্য পেয়েছে। এই সংগ্রহের স্লিক ও মিনিমালিস্ট ডিজাইনের পোশাকগুলো সবার বেশ নজর কেড়েছে।


ফ্যাশনে বাইকার স্টাইলের জনপ্রিয়তা সব যুগেই ছিল। তবে তা কেবল পুরুষ বাইক রাইডারদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। তরুণ ফ্যাশন শিক্ষার্থী লিজা আক্তারের ফার্স্ট লেন লেডি বাইকার সংগ্রহটি সেই গৎবাঁধা গণ্ডি থেকে বের হওয়ার ছোট প্রচেষ্টা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আবহাওয়া পরিবর্তনের বিষয়টি। লিজার এই বৈচিত্র্যময় সংগ্রহে আছে স্কার্ট, জ্যাকেট, ফিটেড প্যান্ট, ওভারকোট ইত্যাদি। এগুলো তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে প্রিমিয়াম কোয়ালিটির লেদার।

বিজ্ঞাপন

আরেক ফ্যাশন শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস অনুপ্রেরণা ছিল সিগারেটের ধোঁয়া। তাই সংগ্রহের নাম রেখেছেন ‘স্মোক’। এতে ছিল কেপ স্টাইল টপস, স্কার্ট, প্যান্ট, মিডি ড্রেস। পোশাকে ধোঁয়ার এফেক্ট ফুটিয়ে তুলতে ক্রাশ ও ক্রিঙ্কল ফেব্রিক ব্যবহার করেছেন জান্নাতুল ফেরদৌস। বিভিন্ন রঙের ধোঁয়ার কথা মাথায় রেখে ট্রেন্ডি হলোগ্রাফিক ফেব্রিকের ড্রেসও ছিল ছোট সংগ্রহটিতে।


বর্তমান সময়ের বেশ আলোচিত একটি টার্ম হলো মেটাভার্স। এই ভার্চ্যুয়াল জগৎ বিস্তৃত পরিসরে ভিন্নমাত্রার ডিজিটাল অভিজ্ঞতাকে অন্তর্ভুক্ত করে। মেটাভার্সের গেমিং অ্যাভাটার, পিক্সেলস, ভার্চ্যুয়াল ইনফ্লুয়েন্সার ম্যাকুয়েলা ও নিজের তৈরি কাস্টমাইজড অ্যাভাটার থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে মেটাভার্স নামের সংগ্রহ তৈরি করে তাহানি কৌশি। এতে আছে নিয়ন গোলাপি, সবুজ, কমলা, কালো মিনি স্কার্ট, টপস, ওয়াইড প্যান্ট, জ্যাকেট। এই ওয়েস্টার্ন ওমেন্সওয়্যারগুলো দেখলে সাই-ফাই বা এনিমেশন চরিত্রের কথা মনে যায়।

শিল্প আত্মসচেতনতা ও যোগাযোগের একটি হাতিয়ার হয়ে ওঠে। শিল্পকলার মাধ্যমে অস্বস্তি, দ্বন্দ্ব ও সমস্যাগুলো সমাধানের দক্ষতা বিকাশ করতে, আত্মসচেতনতা বাড়াতে এবং অন্তর্দৃষ্টি অর্জন করতে সহায়তা করে। এই দর্শন থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে দৃষ্টিনন্দন একটি সংগ্রহ বানিয়েছে জাকিয়া ফেরদৌস। কাট ও প্যাটার্নে বৈচিত্র্যের পাশাপাশি নজর কেড়েছে পোশাকে ফুটিয়ে তোলা গুস্তাভ ক্লিমটের দ্য কিস, এডওয়ার্ড মাঞ্চের দ্য স্ক্রিম ও পাবলো পিকাসোর গের্নিকা পেইন্টিংয়ের প্রিন্ট।

২০০৮ সাল থেকে বিইউএফটির ফ্যাশন স্টাডিজ বিভাগের যাত্রা শুরু। সেই থেকে প্রতিবছরই কালেকশন ডেভেলপমেন্ট কোর্সের অধীন এমন প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা নানা রকম থিম নিয়ে কাজ করেন। প্রদর্শনীর জন্য থিম নির্বাচন, ডিজাইন ভাবনা, ফেব্রিক পছন্দ করা, রঙের ব্যবহার অর্থাৎ পুরো প্রক্রিয়া তাঁরা শিখতে পারেন হাতে-কলমে। এতে করে পেশাদার কোনো কাজ করার আগেই তাঁদের অভিজ্ঞতা অর্জন হয়, যা কাজে লাগে পরবর্তীকালেও।

ছবি: বিইউএফটি

প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১: ১৯
বিজ্ঞাপন