তাহমীনা শৈলী এক যুগের বেশি সময় কাজ করছেন গয়না নিয়ে। কাছে থেকে দেখেছেন তিনি তাঁতী বাজারের স্যাকরাদের। তাঁদের গল্প তুলে ধরতেই তাঁর গয়নার উদ্যোগ শৈলীর অনবদ্য আয়োজন স্যাকরার তাঁতী বাজার। ১০ অক্টোবর বিকেল ৫টায় লালমাটিয়ার দ্বীপ গ্যালারিতে উদ্বোধন হবে শৈলীর এই প্রদর্শনী।
দীর্ঘদিন গয়নার জগতে আছেন তাহমীনা শৈলী। সৃজনের নিত্যনতুন অভিজ্ঞতায় পূর্ণ তাঁর ঝুলি। ১৩বছর কাছ থেকে দেখেছেন তাঁতী বাজারের স্যাকরাদের। তাঁদের প্রতিদিনের জীবন, কাজের জায়গা, ক্রেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক, সুখদু:খের গল্পগুলো সবার কাছে তুলে ধরতে চান তাহমীনা। এই প্রদর্শনীতে ভিডিও, ছবি ও লেখায় উঠে আসবে তাঁতি বাজারের স্যাকরাদের গল্প। এছাড়া গয়না তো থাকবেই।
জানা গেল, শৈলীর ডিজাইন করা গয়নার পাশাপাশি বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে মনমাতানো নামের প্রেমফাঁস-এর মতো আমাদের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী কিছু গয়না থাকবে।
প্রদর্শনীর প্রস্তুতি দেখতে দ্বীপ গ্যালারিতে ৯তারিখ বিকেলে গিয়ে দেখা গেল, গ্যালারির দুটো কক্ষ জূড়ে তোড়জোড় চলছে জায়গাটিকে স্যাকরাদের কারখানার আমেজ দেওয়ার। চারদিকে ধূপের গন্ধ আর হাঁপর, হালখাতা, কাঠের টাকা রাখার বক্স , বলনা সাজিয়ে রাখা হচ্ছে। দেয়ালে, তাকে আকর্ষণীয় বিন্যাসে রাখা হচ্ছে গয়না। গয়না তৈরির নানা উপকরণ যেমন আছে তেমনি চোখে পড়েছে শঙ্খ ও গণেশের মূর্তি।
ক্যাশবাক্সে হালখাতা রাখাকে ব্যবসায় লক্ষ্মী আসার প্রতীক ভাবেন স্যাকরারা। সব ধর্মের দোকানিরাই হালখাতা রাখতেন। এখনও রাখেন। সেই আমেজটাই তুলে আনতে চেয়েছেন, জানান তাহমীনা শৈলী। বলাই বাহুল্য, এই লক্ষ্মী কোনো প্রতিমা নয়, বরং ব্যবসার লক্ষ্মী বা সমৃদ্ধি।
ক্যাশবাক্সের ওপর লাল আলোর বাতি। হালখাতার সঙ্গে সাজানো হচ্ছে ধাতু কাটা, জোড়া লাগানো ও নকশা করার যন্ত্রপাতি। পিঁড়ি পেতে মেঝেতে বসে যেমন করে কাজ করেন কারিগররা, ঠিক সেভাবেই সাজানো হচ্ছে গ্যালারি।
প্রামাণ্যচিত্র দেখানোর জন্য যে কর্নারটি তৈরি হয়েছে, সেখানে কাঠ ও দড়ির চারপায়া। এর পেছনের কারণটি বলছিলেন তাহমীনা নিজেই। 'পুরান ঢাকার মানুষ একটু আরামপ্রিয়। তাঁরা এমন দড়ির বিছানা পেতে উঠানের ছোট খোলা অংশটুকুতে কিংবা বারান্দায় গল্প করেন। এছাড়াও দেখা যায় নানি-দাদি বা যাঁদের অনেক বয়স হয়েছে তাঁরাও ছাদে এমন চারপায়া বিছিয়ে শুয়ে বসে গল্প করেন। সেই আবহটুকু ফুটে তুলতেই প্রদর্শনীতে এটা রাখা'।
১৯ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী। উদ্বোধনের পরদিন থেকে বেলা ৪টায় শুরু হয়ে এ আয়োজন খোলা থাকবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
উল্লেখ্য, প্রতিবছর গয়নাকেন্দ্রিক অভিনব ও থিমভিত্তিক প্রদর্শনী আয়োজন করে থাকেন তাহমিনা শৈলী। গয়নার যাত্রা নর্তকী ও বাইজিদের মাধ্যমে। তাঁদের স্মরণে রেখে গতবারের প্রদর্শনী করেছিলেন তিনি। তবে এবারের আয়োজনে গয়না বিক্রি হবে না বলেন তিনি। জানান, প্রদর্শনীটি ১০দিনের হওয়ায় প্রথম দিকের দিনগুলোতেই অনেকেই কিনে নেন পছন্দের গয়নাটি। এতে করে শেষের দিনগুলোতে দর্শনার্থীরা অনেক পণ্যই দেখতে পাননা। তাই এবার ১০দিন প্রদর্শনীর পর বিক্রি হবে, প্রদর্শনীতে নয়।
গতবছরের অভিজ্ঞতা থেকে তাহমীনা শৈলী আশা করছেন, এবারও উপচে পড়া ভীড় হবে, আর দর্শনার্থীরা পছন্দ করবেন এই আয়োজন। তিনি বলছিলেন, 'গতবার দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের সাড়া আমাকে অভিভূত করেছে। প্রায় প্রতিদিনই ছিল উপচে পড়া ভীড়'। এখন আজ ১০ অক্টোবর বিকেলে প্রদর্শনীর পর্দা ওঠার অপেক্ষায় রয়েছেন সবাই।